বিশ্ব বইয়ের রাজধানী

 

বিশ্ব বইয়ের রাজধানী


বই পড়ার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে ইউনেস্কো প্রতিবছর  একটি শহরকে বইয়ের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করে। ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবসকে কেন্দ্র করে ঐ দিন থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য একটি শহর বেছে নেওয়া হয় বইয়ের রাজধানী হিসাবে। বইয়ের প্রচার এবং বই পাঠ'কে উৎসাহিত করতে নির্দিষ্ট একটি শহরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ যে শহর বইয়ের রাজধানী হিসাবে মনোনীত হয় সে শহর সব বয়সের পাঠকদের বই পড়ার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা এবং ইউনেস্কোর মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ক্ষেত্রে শহরটি নির্দিষ্ট কোন আর্থিক পুরস্কার পায় না, তবে বই পড়া ও শিক্ষার প্রচারে ইউনেস্কোর সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়ে থাকে।


১৯৯৫ সালে ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস হিসেবে চালু হওয়ার ছয় বছর পর ২০০১ সালে ইউনেস্কোর হাত ধরে ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল তথা "বিশ্ব বইয়ের রাজধানী" প্রোগ্রামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০১ সালে সর্বপ্রথম স্পেনের মাদ্রিদ শহরকে প্রথম বিশ্ব বইয়ের রাজধানী শহর হিসেবে মনোনীত করা হয়। সাধারনত প্রতি বছর একটি নতুন শহরকে বইয়ের রাজধানী শহর হিসেবে ঘোষনা দিয়ে থাকে। বিশ্ব বইয়ের রাজধানী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি উপদেষ্টা কমিটি কাজ করে থাকে যেটি ইউনেস্কো, আন্তর্জাতিক প্রকাশক সমিতি, আন্তর্জাতিক লেখক ফোরাম এবং আন্তর্জাতিক বই বিক্রেতা ফেডারেশন, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন এবং ইনস্টিটিউশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ২০২৫ সালে বিশ্বের বইয়ের রাজধানী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ব্রাজিলের শহর "রিও ডি জেনিরো" কে।


২০০১ সালে উপদেষ্টা কমিটি পরবর্তী দুবছরের জন্য নতুন রাজধানী নির্বাচিত করে রেখেছিল, মাদ্রিদের পরে, ২০০২ সালে আলেকজান্দ্রিয়া এবং ২০০৩ সালে দিল্লি বিশ্ব বইয়ের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। এরপর থেকে দু'বছর আগ থেকেই নতুন রাজধানী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে। আর মনোনীত হওয়ার পরে দু'বছর ধরে শহরটির কার্যক্রম মনিটরিং করে সাপোর্ট দেয় ইউনেস্কো। কোন ক্ষেত্রে মনোনয়নের যোগ্যতা অনুসারে শহরটি কাজ করতে না পারলে কমিটি নতুন শহর নির্বাচন করে দেয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউনেস্কোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিশ্বের বইয়ের রাজধানীর মনোনয়নের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকে। যেমন ২০২৫ সালের জন্য আবেদনের করার সুযোগটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়েছিল৷ কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের মাঝে থেকে ও ইউনেস্কো ঘোষিত শর্ত পূরণ করে এই আবেদন করা যায়। নিয়মাবলীর অধিকাংশই বই ও শিক্ষার প্রচার ও প্রসারকে গুরুত্ব দিয়ে করা। পাশাপাশি অবকাঠামো, পরিবেশ ও বই পড়ুয়া জনসংখ্যার বই পড়া সম্পর্কে সচেতনতার ব্যাপারগুলোকেও এখানে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।  


বিশ্বের সব মহাদেশেই সুষম প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য উপদেষ্টা কমিটি একই অঞ্চলের শহরগুলিকে পরাপর মনোনয়ন দেয় না। যেমন ২০২৫ এ দক্ষিন অ্যামেরিকার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো মনোনয়ন পেয়েছে তার মানে আগামী কয়েক বছর দক্ষিণ অ্যামেরিকার কোন শহর মনোনয়ন পাবে না। আর ব্রাজিলের কোন শহর অন্তত আগামী দশ বছরের আগে আর আবেদন করতে পারবে না। 


বইপড়া সম্পর্কিত দারুন এই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হলো অসংখ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে সাক্ষরতা এবং বই পড়ার সমস্যাগুলির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল প্রগ্রামটি যেকোন দেশের স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে বই পড়ার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেয় ও বই সম্পর্কিত যতোগুলো ব্যক্তি, শিল্প বা সংস্থা আছে (লেখক, পাঠক, প্রকাশক, লাইব্রেরী ইত্যাদি) তাদের ব্যাপারে নানান গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহন করে। এটি একটি শহর, দেশ ও জাতির শিল্প,সংস্কৃতি, সাহিত্য সম্পর্কিত ঐতিহ্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সহায়তা করে থাকে।


২০২৫ সালে বিশ্ব বইয়ের রাজধানী হলো রিও ডি জেনিরো - ব্রাজিল 



শুভ্র মামুন

Previous Post Next Post