![]() |
কবি আল মুজাহিদী |
'কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫'-এ ভূষিত হয়েছেন কবি আল মুজাহিদী। বাংলা একাডেমি ২০১৯ সাল থেকে প্রতি দুবছর পরপর এই পুরষ্কার প্রদান করে। বাংলা একাডেমি প্রদত্ত কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ টাকা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিককে এ দ্বি-বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করা হয়
আল মুজাহিদীর জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৪৩, টাঙ্গাইলে। জীবিকার শুরুতে তিনি কাটিয়েছেন সাংবাদিকতা পেশায়। ইত্তেফাক, যায়যায় দিন পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন।
হে আমার অগ্নিদ্রোহী মৃত্তিকা,
তুমি চিরকাল মুক্ত থাকো। স্বর্গের বিহঙ্গডানা ঝেড়ে যাক
সাতটি আকাশ আর সাতটি সাগরের অববাহিকায় আমি জেগে উঠি বারবার জ্বলন্ত সত্তার অগ্নিদাহেপিতৃভূমি,
হে আমার পিতৃভূমি,
তোমার অস্তিত্বএবং অস্তিত্বের সমগ্রতায়আমি অস্তিমান।
আল মুজাহিদী
"আমার মৃত্তিকা এবং মৃত্তিকাবাসী"
আল মুজাহিদী শুধু একজন কবি নন। উপন্যাসিক, গল্পকার, ছড়াকার, অনুবাদক, কাব্যকার, প্রবন্ধকারক তিনি। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে হেমলকের পেয়ালা, মৃত্তিকা অতি মৃত্তিকা, কাঁদো হিরোশিমা কাঁদো নাগাসাকি, সিলুএই প্রভৃতি বিখ্যাত। গল্প: বাতাবরণ, প্রপঞ্চের পাখী, বলদা গার্ডেন। উপন্যাস: চাঁদ ও চিরকুট, প্রথম প্রেম, কবিতাসু, মানব বসতি। ছড়াগ্রন্থ: হালুম হুলুম, তালপাতার সেপাই, খোকার আকাশ। কিশোর উপন্যাস: ছুটির ছুটি, লালবাড়ির হরিণ, মাটির পুতুল। প্রবন্ধ: যুগান্তরের যাত্রী, কাল কালান্তর, জীবন অনাদি। তার অনুবাদ: হাইনরীশ হাইনের কবিতা, কাইফ আজমীর কবিতা, বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা প্রভৃতি আমাদের বেশ আনন্দ দেয়।
কবি আল মুজাহিদী তার লেখনি জন্য দীর্ঘ জীবন সম্মানিত হয়ে এসেছেন। ২০০৩ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়াও অন্যান্য বহু পুরস্কার, তিনি লাভ করেন।
“একজন সফল রাজনীতিক হওয়ার কথা ছিল,
তারপর জীবনের গতি পথ হঠাৎ পাল্টে গেল।
মন্ত্রী সান্ত্রী না হয়ে তিনি হলেন সফল কবি,
তার কলমে আঁকেন তিনি মানুষের জীবনের ছবি।”
কবি মুহম্মদ আনিসুল হক অনেক দুঃখ নিয়ে, আক্ষেপ করে কথাগুলো তার কবিতায় স্থান দিয়েছেন। তুখর ছাত্র নেতা। অথচ রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সোজা সাহিত্য কর্মে জীবন কাটানো এক বিচিত্র ঘটনা। যা আমাদের দেশে হয় না। সকলে রাজনীতি করে সহজে বড় হতে চান, খ্যাতি অর্জন করতে চান, চেষ্টা করেন। কেউ সফল হয়, কেউ হয় না। কিন্তু কবি আল মুজাহিদী এর ব্যতিক্রম।
কবি তার কাব্যগ্রন্থ ‘কাঁদো হিরোশিমা কাঁদো নাগাসাকি খুব সুন্দরভাবে তার হৃদয়ের কথা প্রকাশ করেছেন। কবি বলেছেন,
“যুদ্ধের ঐ ভয়াবহ দলিল আমাকে পাঠ করতে বলো না আমি অন্ধ হয়ে যাবো! সহসা বধির হয়ে যাবো!
নিশ্চয়, নিথর হয়ে যাবো।
হিমযুদ্ধে মিশে যাবে আমার সমস্ত বোধি জাগর চৈতন্য।
নৃশংসতা কোনো অধীত বিষয় নয়।
পিকাসো আপনি ও আঁকবেন না দুঃস্বপ্নের চিত্রকলা গোয়ের্নিকা।
হিরোশিমা!”
কবি আজও আমাদের মাঝে আছেন। তিনি তার গভীর সাহিত্য চর্চা নিয়মিত করে যাচ্ছেন। তার সুন্দর ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। কবি বেঁচে থাকুক অনেক বছর, অনেক দিন আমাদের মাঝে। কবির লেখা ষাট দশকের “জয় স্বাধীন বাংলা শীর্ষক প্রবন্ধের কিছু অংশ পাঠকের জন্য এখানে উল্লেখ না করার লোভ সামলানো দায়। কবির লেখার কিছু অংশ বলে প্রবন্ধের সমাপ্তি টানছি। কবি তখন লেখক হয়ে বলেন,
“ভাষার সংগ্রামটি ছিলো সমগ্র বাঙালী জাতির আত্ম আবিস্কার সংগ্রাম। অস্তিত্বেও সর্বময় শক্তি উদ্বোধনের সংগ্রাম কেনা ভাষাই তো অস্তিত্ব। অস্তি¡ই তো আপন শক্তির মহিমা। সেই নিরিখে সর্বতোভাবে বলা যায়, ভাষার সংগ্রামে অন্তর্নিহিতভাবে লুকায়িত ছিলো বাঙালী জাতির স্বাধীনতার বীজকণা, সম্মিলিকত মানুষের অস্তিত্ব চেতনার ঐক্যমন্ত্র। আসলে ভাষার সংগ্রামটিই ছিল সকল অর্থে স্বাধীনতার সংগ্রাম।”