প্রাচীন বাংলার গৌরবঃ- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
১৩২১ বঙ্গাব্দে অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী একটি অভিভাষণ পাঠ করেন।বিষয়বস্তু ছিল বাংলার গৌরবময় অধ্যায় বা ব্যক্তি। সেই ভাষনে কুড়িটি গৌরবের কথা উল্লেখ করেন শাস্ত্রী। এবং পরে এই ভাষনটি সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়।
অনেকবছর পরে সেই পান্ডুলিপি সংগ্রহ এবং প্রকাশও কম গৌরবের নয়। সেজন্য সম্পাদক জিসান হাবিবকে ধন্যবাদ। এবং এই কুড়িটি 'গৌরব'-এর সঙ্গে সম্পাদক যুক্ত করেছেন চারটি সর্বার্থে অমূল্য লেখা, যারা প্রাবন্ধিকের পরিণত প্রজ্ঞা এবং কঠোর গবেষণার জন্য বাংলা সাহিত্যে দেদীপ্যমান হয়ে আছে।
অহংকার করার মতো বিষয় বাংলাদেশে কম না। কিন্তু কি নিয়ে অহংকার করবেন অাপনি? আজকের এই দিনে কি গৌরব আার কোনটি না তা-সব তর্ক বাদ দিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাচীণ বাংলায় কি কি গৌরব খুঁজে বের করেছেন তা দেখে আসা যাক।
১. হস্তি চিকিৎসা
২. নানা ধর্মমত
৩. রেশম
৪. বাকলের কাপড়
৫. থিয়েটার
৬. নৌকা ও জাহাজ
৭. বৌদ্ধ শীলভদ্র
৮. বৌদ্ধ লেখক শান্তিদেব
৯. নাথ পন্থ
১০. দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান
১১. জগদ্দল মহাবিহার ও বিভূতিচন্দ্র
১২. লুইপাদ ও তাঁহার সিদ্ধাচার্যগণ
১৩. ভাস্করের কাজ
১৪. বাংলার সংস্কৃতি
১৫. বৃহস্পতি, শ্রীকর, শ্রীনাথ ও রঘুনন্দন
১৬. ন্যায়শাস্ত্র
১৭. চৈতন্য ও তাঁহার পরিকর
১৮. তান্ত্রিকগণ
১৯. বাঙালি ব্রাহ্মণ
২০. কায়স্থ ও রাজা
দু একটা গৌরব কেন গৌরব তার কারণ ব্যাখ্যা না করলে চলে না। পাঠকের সুবিধার্থে একটু বলা যাক-
★ পণ্ডিতদের মতবাদ এই যে খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকে যদি বাংলা দেশে হস্তিচিকিৎসা এত উন্নত হইয়া থাকে তবে ডা কম গৌরবের কথা নয়।
★ অন্যদিকে সবাই জানে চিন থেকে রেশম চাষ সারাবিশ্বে ছড়ালেও যা জানে না তা হলো আমাদের দেশে রেশমের প্রস্তুত তার আগে থেকে হয়ে থাকে। যা প্রাকৃতিক ভাবে উন্নত। সুতরাং এ বিদ্যা বাংলার নিজস্ব, ইহা কম গৌরবের বিষয় নয়।
★ অনেকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে খ্রিস্টের দুইশো বছর আগে থেকে বাংলায় নাটকের একটা সতন্ত্র ধারা চালু ছিলো। যা বাঙালির নিজস্ব তা অবশ্যই গৌরবের।
★ অন্যদিকে শীলভদ্র, শান্তিদেব এবং দীপঙ্কর তাহাদের জ্ঞানে উপমহাদেশ জয় করিয়া চলেছেন। তাহারা জ্ঞানের দ্বারা সকলের কাছে পরিচিত। এবং তৎকালীন সময়ের বিহার গুলো ছিলো জ্ঞানের পিঠ স্থান। সুতরাং এই সকল বোদ্ধা এবং বিহার বাঙালির অবশ্যই গর্ব করার বিষয়।
সুতরাং অহংকার করার মতো বিষয় তো জ্ঞান ও জ্ঞানী, এবং তাদের বিদ্যা।
যদি আপনি উপমহাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাসে আগ্রহী হন তাহলে এই বইটি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ নামধেয় এ ভূ-ভাগে কখন কোন কালে যে নরকুলের পদচিহ্নের বিস্তার ঘটেছিল এবং কখন তাদের কণ্ঠস্বরে বাংলা ঝংকৃত হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ হিসাব করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলা ভাষা থেকে যে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে সেই বাঙালির গৌরব সন্ধান কম জ্ঞানের এবং গৌরবের বিষয় নয়।