"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি" গানটি যেভাবে আমাদের হলো:-
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী। ভাষা আন্দোলনের দাবীতে ছাত্র জনতার মিছিল নামে রাজপথে। পুলিশের বুলেটে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। আহত এবং নিহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। খবর ছড়িয়ে যায় সারা ঢাকাতে। ছাত্রছাত্রীরা ভীড় জমান মেডিকেলের করিডোরে। ঢাকা কলেজের আইএর ছাত্র আবদুল গাফফার দেখতে যান সেখানে। মেডিকেলের করিডোরে ভাষা সংগ্রামী রফিকের লাশ দেখে আমন মনেই বলে উঠেন, " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি"
সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি রচনা করেন। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটিতে সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর।
১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে সংকলন’-এও প্রকাশ হয়েছিল দেশাত্মবোধক এ গানটি। ‘একুশের শিরোনামে’ গানটি একটি খবরের কাগজের শেষ পাতায় প্রথম প্রকাশ হয়েছিল। তবে সেই সময় গীতিকারের নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে অবশ্য গীতিকারের নাম ছাপা হয়। ভাষা আন্দোলনের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গাওয়া হয় গানটি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল গাফফার। আউটডোরে মাথার খুলি উড়ে যাওয়া একটি লাশ দেখতে পান তিনি। যেটি ছিল ভাষা সংগ্রামী রফিকের লাশ। এ দৃশ্য দেখার পর গীতিকারের মনে হয়েছিল, ‘এটা যেন তার নিজের ভাইয়ের রক্তমাখা লাশ’। তারপর তাৎক্ষণিক মনে জেগে উঠে গানের প্রথম দুটি লাইন (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...)। পরে ধীরে ধীরে পুরো গানটি লেখেন আবদুল গাফফার।
তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল লতিফকে গানটি দেয়া হলে এতে সুর করেন তিনি। তার সুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু হয় এটি। ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টার সময় গানটি গেয়েছিলেন। কিন্তু গানটি গাওয়া ও লেখার অপরাধে কলেজ থেকে ১১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সেই সময়।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শত শত মানুষ খালি পায়ে শহীদ মিনার অভিমুখে হেঁটে যান। শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরিতে এ গানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় মাতৃভাষা বাংলার জন্য বুকের তাজা রক্ত দেয়া শহীদের প্রতি। সেই থেকে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটি আমাদের"।