নারায়ণগঞ্জের জ্ঞানের প্রদীপ : আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার

নারায়ণগঞ্জের জ্ঞানের প্রদীপ: আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার


ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ শহর। এ শহরের সবচেয়ে প্রাচীন পাঠাগারের নাম 'আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার'। বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সজ্জিত হলেও সূচনা লগ্নে এটি ছিল একটি সাধারণ পাঠাগার। ১৯২৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রথম এবং সর্ববৃহৎ পৌর পাঠাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এই পাঠাগার। পাঠাগার ভবনটি তখন ছিল খুব সাধারণ কিন্তু এর আবেদন ছিল অনেক বেশি। জানা যায় ঐ সময়ে, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর অপর পাড় থেকেও পাঠকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তর সময়ে দীর্ঘকাল এ পাঠাগারটি নারায়ণগঞ্জ শহরে শিল্প—সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

১৯৮৪ সালে পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা মৃত্যুবরণ করলে তার স্মরণে পৌর পাঠাগারটির নাম আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার করা হয়।

পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে একটি সুসজ্জিত, আধুনিক এবং সকল সুযোগ—সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাঠাগারটির নকশা প্রণয়ন করেন স্থপতি নুরুজ্জামান। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশন ২৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই পাঠাগার ও মিলনায়তনটি নতুন করে নির্মাণ করে।

ছয় তলা বিশিষ্ট পাঠাগারটির লেভেল-১ থেকে লেভল-৪ পর্যন্ত আছে ২৮০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, সেমিনার কক্ষ, উন্মুক্ত বসার স্থান, উন্মুক্ত গ্যালারি ও আর্ট গ্যালারি। লেভেল-৫ থেকে লেভেল-৬ এ আছে পাবলিক পাঠাগার, ছোটদের পাঠাগার, স্টুডিও থিয়েটার, ছাদে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ ও ক্যাফেসহ খোলা আকাশ দেখার ব্যবস্থা। যা পাঠকের মনকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, লেখাপড়া করার সুব্যবস্থাসহ শিশু-কিশোরদের জন্য মনোমুগ্ধকর শিশু কর্নার, গবেষকদের জন্য গবেষণা কর্নার, নারায়ণগঞ্জ এর ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানার জন্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ কর্নার। যা একটি স্মার্ট গ্রন্থাগার রূপে প্রকাশ পেয়েছে।

সপ্তাহে ৭ দিনই উন্মুক্ত রয়েছে এই আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন পাঠকের আনাগোনা থাকে এই পাঠাগারটিতে। তবে বয়সের কোনো প্রভাব এই ক্ষেত্রে নেই। ছোট থেকে বড় সব বয়সী পাঠকই আসেন এই পাঠাগারে।

বঙ্গবন্ধু কর্নার

প্রতিদিন বিকাল ৪ ঘটিকার পর পাঠকের সমাগমে মুখোরিত থাকে এই আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার। তবে রমজান মাস উপলক্ষ্যে বেলা ১২ টার পর পাঠকদের পদচারণা বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন লাইব্রেরিয়ান লাইজু আক্তার। তিনি আরও জানান, পাঠাগার ব্যবহার করছে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই। সব ধরনের মানুষ যেন এখানে এসে তাদের চাহিদা মাফিক সেবা পায় সেটি তারা নিশ্চিত করছে।

ছোটদের জন্য শিশু কর্নার তাদের বিশেষ আকর্ষণ। যেখানে শিশুরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী বই পড়তে, খেলাধুলা করতে এবং প্রাণবন্ত কিছু সময় কাটাতে পারছে। শিশুর অন্তরে বই পড়ার বীজ বপন করতে এবং সেই অভ্যাস গড়ে তুলতেই তাদের এই প্রচেষ্টা। এমনকি বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেশন এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেখানে শিশুদের গল্প ও খেলার ছলে বই পাঠের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা হচ্ছে।

এছাড়াও তারা প্রতি রবিবার একটি পাঠচক্রের আয়োজন করে থাকেন। যেখানে বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসে বিভিন্ন টপিক অনুযায়ী নিজেরা আলোচনা করে তাদের জ্ঞানকে বিকশিত করতে পারছে।

আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার নারায়ণগঞ্জের মানুষদের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে সাহায্য করছে প্রায় শতবছর ধরে। এই আলোর শিখা জ্বলুক যুগ যুগ ধরে।

লেখক : সাকিবুন নাহার
Previous Post Next Post