আমরা যারা বিল গেটস এর ফেসবুক এবং টুইটার ফলো করি তারা হয়তো মাঝেমধ্যে বই হাতে ছবি দেখে থাকবো। কিন্তু আপনি কি জানেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বইয়ের মালিকও এই ব্যক্তি। যে বইয়ের মূল্য তিনশো কোটির বেশি। যেখানে তিনশো টাকার একটা বই কিনতে আমাদের মন চায় না, সেখানে বিল গেটস তিনশো কোটি টাকা দিয়ে বই কিনে রেখেছেন। ৭২ পৃষ্ঠার হাতে লেখা একটি ব্যক্তিগত নোটবুকই হচ্ছে সেই বই। বইটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘কোডেক্স লিচেস্টার’র মূল পাণ্ডুলিপি।
১৫০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘কোডেক্স লিচেস্টার’ বইটি গুরুত্বপূর্ণ সব বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর তথ্যচিত্রে ভরপুর। ফসিল থেকে শুরু করে চাঁদের আবর্তন পর্যন্ত। ১৭টি ভাঁজ করা পৃষ্ঠার দুই পাশে এবং প্রতিটি পৃষ্ঠার উভয় পাশে মোট ৭২টি পৃষ্ঠাজুড়ে তিনি বিজ্ঞান ও চিত্রকলার এক চমৎকার সংস্রব ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি ল্যাটিন ভাষায় এটি লিখেছেন এবং বইটির বিশেষত্ব হলো এটি আয়ন লিখন। অর্থাৎ উল্টো থেকে লেখা আয়নায় দেখলে তখনই ঠিক পড়া যায়। জ্যোতির্বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি এতে বর্ণিত হয়েছে কীভাবে বহুকাল ধরে একটি দেহাবশেষ ক্রমান্বয়ে ফসিলে রূপান্তরিত হয়, নদীর গতিবিধি কীভাবে পরিবর্তিত হয়, চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর আবর্তন কীভাবে ঘটে, পূর্ণিমা ও গ্রহণ-এর ব্যাখ্যাসহ আরও মূল্যবান সব তথ্য। এছাড়া জগদ্বিখ্যাত এই চিত্রকর বইটিতে ডুবোজাহাজ ও বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
১৫০৮ থেকে ১৫১০ সালের মধ্যে এই বইয়ের মূল পাণ্ডুলিপিটি তৈরি হয় বলে জানা যায়। ১৭১৯ সালে থমাস কোক বইটি কেনেন। প্রথমে এই নোটবুকে কোনো নাম ছিল না বিধায় তিনি এর নাম দেন ‘কোডেক্স’। পরে ১৯৮০ সালে একজন ধনী শিল্পপতি-সংগ্রাহক আরমান্ড হ্যামার বইটি কিনে নেন এবং পুনরায় এর নাম দেন ‘কোডেক্স হ্যামার’ যা ‘কোডেক্স লিচেস্টার’ নামে এখন পরিচিত। সবশেষে ১৯৯৪ সালের ১১ নভেম্বর বইটি এক নিলামে উঠলে বিল গেটস তা $30,802,500 ডলারে কিনে নেন। আর তখন থেকেই এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি বই হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে।