আজিমপুরের জ্ঞানের বাতিঘর- আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি পাঠাগার


ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক পাঠাগার। প্রচার এবং পরিচিতির অভাবে অনেকে জানেন না এইসব পাঠাগারের তথ্য। ১৯৬০ সাল থেকে আজিমপুরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি পাঠাগার। লেখক শামসুদ্দীন আবুল কালাম, সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাহানারা ইমামের মতো লেখক-সাহিত্যিকেরা ছিলেন এ পাঠাগারের পাঠক।

পাঠাগার মানে থরে থরে সাজানো বই, বসার জন্য চেয়ার টেবিল, নিরিবিলি পরিবেশ আর পাঠক এবং বইয়ের সখ্যতা। শহরের মাঝে এমন একটা পাঠাগারের নাম আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি পাঠাগার। আজিমপুরের মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে এই পাঠাগারটি। সুন্দর সাজানো গোছানো এই পাঠাগারে নিয়মিত পাঠক আসেন। পাঠকদের তাগিদ অনুযায়ী বই সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। বসার জন্য চেয়ার, পর্যাপ্ত আলো বাতাস আর বইয়ের তাক। প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত সাধারণ পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই পাঠাগার। সদস্য পাঠকদের জন্য আছে বই ইস্যু করার ব্যবস্থা।

এই পাঠাগারের যেমন ছিল জৌলুস তেমন ছিল জরা। শুরুর সময়ে পাঠাগারটি পাঠকদের সমাগমে মুখরিত ছিল। কিন্তু আধুনিক সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট এর বহুল প্রচলনে পাঠকদের সংখ্যা কমতে থাকে। পাঠক শূন্য পরে থাকতো পাঠাগারটি।

পাঠাগার আছে কিন্তু পাঠক নেই। তাইতো বইপ্রেমী মানুষদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এলাকার দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছিল পাঠাগারের পক্ষ থেকে। সরকারি কলোনির বাসায় বাসায় গিয়ে বিলি করা হয়েছিল প্রচারপত্র। মাইকে প্রচারিতও হয়েছিল, ‘সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন নতুন বইয়ের সমাহারে লাইব্রেরিকে আপনার জন্য সাজিয়ে তুলেছি। আসুন, বই পড়ুন, জীবন গড়ুন।

হয়ত এখন আর আগের মতো কেও বই পড়ে না। বই পড়ার জন্য আর কেও মায়ের কাছে বকুনি খায় না। তাইতো এই আহ্বান খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। অবশ্য তাও পাঠক আসে, কোনোদিন চার জন, কোন দিন দশ জন। আবার কোনোদিন পাঠক শূন্য পরে থাকে এই পাঠাগারটি। কিন্তু নিয়মিত পাঠকের অপেক্ষায় খোলা এই পাঠাগারটি।

পাঠাগারে বই আছে প্রায় চার হাজার। অধিকাংশ পুরোনো আমলের হাল ফ্যাশানের। তবে ইদানীং নতুন বইয়ের ব্যবস্থায়ও করা হচ্ছে। নিয়মিত পাঠক পেলে, পাঠাগার কর্তৃপক্ষ পাঠকের চাহিদা মোতাবেক বইয়ের সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছেন।

বই পড়া শুধু বিনোদন নয়, জ্ঞানচর্চার বিষয়। আর জ্ঞান চর্চার জন্য দরকার পাঠাগার। খাবারের জন্য হোটেল হয়েছে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল। সবকিছুর আধুনিকায়ন হচ্ছে। মডেল মসজিদ হচ্ছে, উড়াল সড়ক হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে না পাঠাগারের। জাতির উন্নয়নে তরুণদের পাঠাগারমুখী হতেই হবে। এ জন্য দরকার পাঠাগারের উন্নয়ন। কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর দরকার বই পড়ুয়া একটা প্রজন্ম।


আজিমপুর এবং আশেপাশে অবস্থানরত পাঠকরা নিয়মিত যেতে পারেন আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি পাঠাগারে।

কীভাবে যাবেন?
আজিমপুর বাসস্টপ থেকে একটু এগিয়ে আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। তারপর একটু এগিয়ে হাতের ডান দেখতে পাবেন একটি রাস্তা। সোজা গেলে একদিকে ছাপরা মসজিদ, অন্যদিকে সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা। ঠিক তার মাঝখানে হাতের বামে আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতির ভবন। ভবনের নিচতলায় অবস্থিত পাঠাগার কক্ষটি।
Previous Post Next Post