ঘটনাগুলো হয়তো আজও বাস্তব তাইতো এত বছর পরেও বইটি পাঠে আমরা গভীর ভাবে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছি, হবো। আহমেদ ছফার কোন বইকে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নেই। অন্তত "গাভী বিত্তান্ত" বইটিকে তো নয়। এত এত বোদ্ধা এত এত কিছু বলে গেছেন যে নতুন কিছু বলার নেই। কিছু বই একের অধিক বার পড়লেও শ্রী বৃদ্ধি ছাড়া ক্ষতি নেই। নতুন করে আবার পড়ে মনে হলো, বইটির কথা একটু স্বরণ করিয়ে দি। আপনারও একটু স্মৃতিচারণ করুন, বইটি পড়ে কি মনে হয়েছিলো!
আহমেদ ছফার ব্যাঙ্গাত্বক ও বিদ্রূপধর্মী রচনা "গাভী বৃত্তান্ত"। যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরমহলের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন মিঞা মোহাম্মদ আবু জুনায়েদ। গোবেচারা ধরনের এই মানুষটির ডিপার্টমেন্ট কিংবা ডিপার্টমেন্টের বাইরে কোন বন্ধু নেই। কিন্তু কি করে তিনি ভিসি হওয়ার মতো আশ্চর্যতম ঘটনা সাধিত করলেন তা উচ্চাঙ্গের ট্রাজেডি বটে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ কোনকিছু সহজে হবার নয় সেখানে এই নিরিহ মানুষটির উপাচার্য হওয়ার ঘটনা অলৌকিক বটে।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় আগুন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ভূখন্ডে লেপ্টে আছে সেখানে আজ জরা-খরা ডানা বেঁধেছে। মাছের পচন যেমন মস্তক থেকে শুরু হয়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অসুখের জীবাণু শিক্ষকদের চিন্তা চেতনায়। অবশ্য এখানে শিক্ষক বলে কিছু নেই। আছে হলুদ, ডোরাকাটা আর নীল দল।
জুনায়েদ সাহেব পদার্পণ করলেন উপাচার্য ভবনে, বাসভবনটি ব্রিটিশ স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন বটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্ষমতার কৃতিত্ব পেয়ে কি করবেন তিনি? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী আবাসন সমস্যায় জর্জরিত, ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারছে কিন্তু পড়াশোনা আর শেষ হচ্ছে না। শিক্ষকদের নজর ছাত্র পড়ানো থেকে পদের দিকে বেশি। সেখানে এসব সমস্যার শ্রী বৃদ্ধির উপায় না খুঁজে উপাচার্য মহাশয় কিনে আনলেন এক গাই গরু। তারপর থেকে সেই গরুই উপাচার্য মহাশয়ের ধ্যান জ্ঞান।
আবু জুনায়েদের গোয়াল ঘরটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরমহলের চিত্র বর্ণনা করে। এই গোয়ালঘরকে রঙ্গমঞ্চ বানিয়ে আহমদ ছফা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৈন্যদশা তুলে ধরেছেন। মার্জিত ভাষা ব্যবহার করে কীভাবে বিদ্রুপধর্মী উপন্যাস লেখা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আহমদ ছফার 'গাভী বিত্তান্ত' বইটি।
বইঃ গাভী বিত্তান্ত
লেখকঃ আহমদ ছফা
প্রকাশনীঃ খান ব্রাদার্স
মূল্যঃ দুইশত টাকা
রিভিউ :
আতিক আব্দুল্লাহ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়