- না।
- সরকারি?
- সরকারি মানসিক হাসপাতাল আছে।
- তাহলে এ কীভাবে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
- সরকারের আরো অনেক কাজ আছে।
- আর, লোকজন যে ভিড় করে দেখতে আরম্ভ করল?
- তারা মজা পাচ্ছিল।
- অর্থাৎ রাস্তায় নগ্ন পাগলের ঘুরে বেড়ানো তোমাদের জন্য একটা বিনোদন?
- বলতে পার।
- তারপর পাগল যখন মহিলার পেছনে পেছনে যেতে আরম্ব করল, তখন মজা আরো বেড়ে গেল?
- হ্যাঁ।
- মহিলা প্রচন্ড বিব্রত হচ্ছিলেন।
- সে জন্যেই মজা বাড়ছিল।
- তাহলে একজন মহিলা বিব্রত হলে তোমরা মজা পাও?
- হ্যাঁ।
- ওটা একটা পাবলিক নইসেন্স। তোমরা নুইসেন্স উপভোগ করো?
- আমরা নুইসেন্স উপভোগ করি।
উপরের কথোপকথন থেকে একজন বিদেশীর অবাক হবার পরিমাণ আন্দাজ করা কঠিন নয়। এগুলো আমাদের রোজকার ঘটনা। আমরা তেমন অবাক হই না। বরং আনন্দই পাই।
১৮৬৫ সালে অক্সফোর্ডের অঙ্কের মাস্টার Lewis Carrol ছদ্মনামে একটা বই লেখেন। যার নাম Alice in Wonderland. পরবর্তিতে শ্রীহেমেন্দ্র কুমারা রায় সেটার অনুবাদ করেছেন 'আজব দেশে আমলা' নামে। সুকুমার রায়ের 'হযবরল' এবং আজব দেশের আমলা বই দুটো যারা পড়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই প্রচ্ছন্ন ধারণা সুকুমার রায়ের হযবরল-তে আজব দেশে আমলা বা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের ছায়া আছে। সে বিতর্ক নাহয় পরে করা যাবে। কিন্তু আমরা যে অবাক হই 'হযবরল' পড়ে। বুঝতে পারি না একজন লেখন কিভাবে এতটা কল্পনাপ্রবণ হতে পারেন। কল্পনার সীমানা কতদূর অতিক্রম করলে এমন লেখা সম্ভব। সজারু থেকে হাঁসজারু, রুমাল থেকে বিড়াল! এত উদ্ভট কল্পনা কিভাবে আসে একজন লেখকের মাথায়! কিন্তু আমাদের বাস্তবে তাঁকালে সেই অবাক হবার পরিমাণ কিছুটা প্রশমিত হবে বলেই লেখকের ধারণা। একটা উদাহরণ তো উপরে দেয়াই আছে আরো কিছু দেয়া যাক।
১. বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেটের সময় বিদ্যুৎ থাকার নিশ্চয়তা চাই। না হলে খবর আছে। মন্ত্রী পর্যন্ত তটস্থ। কিন্তু এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময়, অপারেশনের সময় এবং এরকম আরো জরুরি সময়ে বিদ্যুৎ থাকা, না-থাকা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
২. এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি। বৃত্তির টাকা যদিও অধিকাংশ স্কুলে পৌছায়নি।
৩. বনিবনা না হওয়ায় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অথরিটি প্রায় জোর করে একজনের বৌ-বাচ্চাকে প্লেনে তুলে দিয়েছে কিন্তু তাকে আটকে রেখেছে।
৪. যার অপারেশনের কথা ছিল, ভুল করে তার পাশের জনকে অপারেশন করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ।
৫. বিশ্ব এজতেমায় পকেট মারার কাজ শেষে, দলবেঁধে তারা মোনাজাতে অংশ নেয়, তারপর বাড়ি ফিরে ভাগ-বাটোয়ারায় বসে।
আজব দেশে আমলা বা হযবরল- তে কি এতটাও উদ্ভট কল্পনার কথা ছিলো, যতোটা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত ঘটছে। লেখকের কল্পনা দেখে কি আমাদের অবাক হওয়া সাজে? মোটেই না। এমন যদি হতো একদিন ঘুম থেকে উঠে আমাদের পত্রিকাওয়ালারা দেখলো তাদের অফিসে সুকুমার রায়, শ্রীহেমেন্দ্র কুমার রায় বা লুইস ক্যারোল বসে আছে। তারা অনুরোধ করতে এসেছে এই ধরণের খবর আর না ছাপাতে। কেননা এসব খবর ছাপালে তাদের বই আর কেউ পড়বে না। এতটা উদ্ভট কল্পনা তাঁরাও করতে পারেনি!
লেখক খুব সহজ ভাবেই এই বইদুটো এবং আমাদের বাস্তবতার মিলিয়ে একটা গল্প সাজিয়েছেন। সেই সাজানোতে তিনি উতরেও গেছেন। তবে গল্পের বুননে কিছুটা হেরফের ছিল। এটুকু বাদ দিলে চমৎকার বই। গল্পের বাস্তবতা বা বাস্তবতার গল্প।
বই - সুকুমারের লজ্জা
লেখক - মঈনুল আহসান সাবের
প্রকাশনী- দিব্যপ্রকাশ
মূল্য- ৬৫ টাকা
রিভিউ:
ইয়াকুবুল হাসান রুপম
প্রকৌশলী
- ওটা একটা পাবলিক নইসেন্স। তোমরা নুইসেন্স উপভোগ করো?
- আমরা নুইসেন্স উপভোগ করি।
উপরের কথোপকথন থেকে একজন বিদেশীর অবাক হবার পরিমাণ আন্দাজ করা কঠিন নয়। এগুলো আমাদের রোজকার ঘটনা। আমরা তেমন অবাক হই না। বরং আনন্দই পাই।
১৮৬৫ সালে অক্সফোর্ডের অঙ্কের মাস্টার Lewis Carrol ছদ্মনামে একটা বই লেখেন। যার নাম Alice in Wonderland. পরবর্তিতে শ্রীহেমেন্দ্র কুমারা রায় সেটার অনুবাদ করেছেন 'আজব দেশে আমলা' নামে। সুকুমার রায়ের 'হযবরল' এবং আজব দেশের আমলা বই দুটো যারা পড়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই প্রচ্ছন্ন ধারণা সুকুমার রায়ের হযবরল-তে আজব দেশে আমলা বা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের ছায়া আছে। সে বিতর্ক নাহয় পরে করা যাবে। কিন্তু আমরা যে অবাক হই 'হযবরল' পড়ে। বুঝতে পারি না একজন লেখন কিভাবে এতটা কল্পনাপ্রবণ হতে পারেন। কল্পনার সীমানা কতদূর অতিক্রম করলে এমন লেখা সম্ভব। সজারু থেকে হাঁসজারু, রুমাল থেকে বিড়াল! এত উদ্ভট কল্পনা কিভাবে আসে একজন লেখকের মাথায়! কিন্তু আমাদের বাস্তবে তাঁকালে সেই অবাক হবার পরিমাণ কিছুটা প্রশমিত হবে বলেই লেখকের ধারণা। একটা উদাহরণ তো উপরে দেয়াই আছে আরো কিছু দেয়া যাক।
১. বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেটের সময় বিদ্যুৎ থাকার নিশ্চয়তা চাই। না হলে খবর আছে। মন্ত্রী পর্যন্ত তটস্থ। কিন্তু এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময়, অপারেশনের সময় এবং এরকম আরো জরুরি সময়ে বিদ্যুৎ থাকা, না-থাকা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
২. এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি। বৃত্তির টাকা যদিও অধিকাংশ স্কুলে পৌছায়নি।
৩. বনিবনা না হওয়ায় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অথরিটি প্রায় জোর করে একজনের বৌ-বাচ্চাকে প্লেনে তুলে দিয়েছে কিন্তু তাকে আটকে রেখেছে।
৪. যার অপারেশনের কথা ছিল, ভুল করে তার পাশের জনকে অপারেশন করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ।
৫. বিশ্ব এজতেমায় পকেট মারার কাজ শেষে, দলবেঁধে তারা মোনাজাতে অংশ নেয়, তারপর বাড়ি ফিরে ভাগ-বাটোয়ারায় বসে।
আজব দেশে আমলা বা হযবরল- তে কি এতটাও উদ্ভট কল্পনার কথা ছিলো, যতোটা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত ঘটছে। লেখকের কল্পনা দেখে কি আমাদের অবাক হওয়া সাজে? মোটেই না। এমন যদি হতো একদিন ঘুম থেকে উঠে আমাদের পত্রিকাওয়ালারা দেখলো তাদের অফিসে সুকুমার রায়, শ্রীহেমেন্দ্র কুমার রায় বা লুইস ক্যারোল বসে আছে। তারা অনুরোধ করতে এসেছে এই ধরণের খবর আর না ছাপাতে। কেননা এসব খবর ছাপালে তাদের বই আর কেউ পড়বে না। এতটা উদ্ভট কল্পনা তাঁরাও করতে পারেনি!
লেখক খুব সহজ ভাবেই এই বইদুটো এবং আমাদের বাস্তবতার মিলিয়ে একটা গল্প সাজিয়েছেন। সেই সাজানোতে তিনি উতরেও গেছেন। তবে গল্পের বুননে কিছুটা হেরফের ছিল। এটুকু বাদ দিলে চমৎকার বই। গল্পের বাস্তবতা বা বাস্তবতার গল্প।
বই - সুকুমারের লজ্জা
লেখক - মঈনুল আহসান সাবের
প্রকাশনী- দিব্যপ্রকাশ
মূল্য- ৬৫ টাকা
রিভিউ:
ইয়াকুবুল হাসান রুপম
প্রকৌশলী