গল্পের প্রোটাগনিস্ট আজু মাই। যে ভূতপ্রেত পোষে, রাক্ষসী। মাটির সাথে বিশেষ সক্ষতা রয়েছে তার। আজুর ছোটবেলা এমন ছিলো না, কেমন ছিলো তা বলবো না। কারণ আসল টুয়িস্ট সেখানে রয়েছে। রাজধানী থেকে পাঁচশো কিলোমিটার দূরের একটা গ্রাম, যারা শহরের রাজনীতি বোঝে না, যুদ্ধ বোঝে না, স্বাধীনতা বোঝে না। একটা মেয়ে বোঝে নিজের সম্ভ্রমের জন্য যুদ্ধ, বাবা বোঝে নিজের সংসারের জন্য যুদ্ধ, মা বোঝে পরিবারকে আগলে রাখার যুদ্ধ। এই গল্প সেই একাত্তরের গল্প। যেখানে হানাদারদের ভয় নেই, ভয় আছে একদল ডাকাতের।
দেশে ডাকাতদের ভয়ে মানুষ ভারতে পালাচ্ছে। কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে পারছে না। ওখানে গিয়ে মরছে কলেরায়। ডাঙায় বাঘের ভয়, পানিতে কুমিরে খায়।এসব খবর আজু মাই জানে না। সে জানে দু গ্রাম পরে ডাকাতেরা আস্থানা গেড়েছে। তারপর কি হলো তার জীবনে?
এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অনেকটা গ্রামে ডাকাত পড়ার মতো। স্বাধীনতা উত্তর এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এমন কোন গ্রাম ছিলো না যেখানে ডাকাতদের ভয় ছিলো না, ঠিক তেমন ঘটনা ঘটে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। কারণ যা অঘটন ঘটায় সব ঐ স্থানীয় জোচ্চোরের দল। ঠিক তেমনি একদল ডাকাত গ্রামটা লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেলো। সেই গ্রামের গল্প আজু মাইয়ের পৈতানের সুখ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর থেকে অনেক দূরের একটা গ্রাম বা একটা পরিবার কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে, মনে প্রশ্ন জাগে না? যুদ্ধ, স্বাধীনতা এসব যারা বোঝে না, তাদের পরিবার কেমন পরিস্থিতিতে পার করেছে দিন? সময়কাল মুক্তিযুদ্ধ, কিন্তু ঘটনা সামাজিক। হত্যা, লুণ্ঠন, খুন, গোলাগুলি নেই, আছে একটা পরিবার/গ্রাম/কিছু মানুষের আখ্যান।
নিজের অভিমত ব্যক্ত না করলে আমার এতকিছু বলা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। আমি বা কেউ নতুন করে একটা মুক্তিযুদ্ধের বই কেন পড়বে? পড়বে কারণ এটা মুক্তিযুদ্ধের বই নয়, বইটি একাত্তরের একটা পরিবারের গল্প। একটা অঞ্চলের গল্প। বিশেষ করে রংপুর অঞ্চলের মানুষ কেউ যদি পড়ে তাহলে আমার থেকে বেশি সে উপলব্ধি করতে পারবে। আর বইয়ের শেষে একগাদা রেফারেন্স বইয়ের উল্লেখ দেখে বোঝা যায় কম খাটুনির ফল নয় এই বই। সুতরাং নতুন করে পুরনো কিছুকে জানতে আজু মাইয়ের পৈতানের সুখ।
বই: আজু মাইয়ের পৈতানের সুখ
লেখক: সাদিয়া সুলতানা
প্রকাশনী: চৈতন্য
মুদ্রিত মূল্য: দুইশত আশি টাকা
ইংরেজি বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়